আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, কোনও ফাঁকা স্থানে এই মসজিদ নির্মিত হয়নি। পুরাতাত্ত্বিক খননে পাওয়া নিদর্শন অনুযায়ী সেখানে অনৈসলামিক উপাদান পাওয়া গেছে। তবে সেই উপাদানগুলো যে রামমন্দিরের তা, নিশ্চিত নয়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার রায় দিতে শুরু করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। রায় ঘোষণার পর সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। রবিবার থেকে শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ।
দীর্ঘ শুনানির পর ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল। শুনানি চলেছিল লাগাতার ৪০ দিন। শুনানির শেষে রায় সংরক্ষিত করে রাখে শীর্ষ আদালত।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে বলেছেন, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এখানেই রামের জন্মভূমি ছিল। তবে কারও বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার না হরণ করে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলি অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নীচে মন্দিরই ছিল । বিচারপতি বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় যুক্তিযুক্ত ছিল। রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বাবরের সহযোগী মির বাকি মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তবে কবে মসজিদ তৈরি হয়েছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ভারতীয় সময় সকাল ১১ টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১ টা) রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় কমবেশি দুই হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। মসজিদটির জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেয় কট্টরপন্থী হিন্দুরা। তাদের দাবি, বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল। রামমন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। তবে মুসলিমরা বলছে, মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির কোনও প্রমাণ নেই। তাদের দাবি, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বলপূর্বক ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাই সেখানে মসজিদটি পুনঃস্থাপনই যৌক্তিক। পড়ে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
পাঠকের মতামত: